জেলা প্রশাসনের ‘উপহার যাবে বাড়ি’ : চাঁদপুরে খাদ্যসহায়তা পেলো ৪ হাজার পরিবার

আশিক বিন রহিম :
কোরোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পরিচালিত ‘ উপহার যাবে বাড়ি ’ প্রোগামের ৩১ মে রোববার ছিলো আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ দিন। কোন প্রকার দরখাস্ত কিংবা লিখিত অনুরোধ নয়, দীর্ঘ সময় হাত পেতে দাঁড়িয়ে থাকাও নয়; ঘরে থেকে কেবলমাত্র ফোন কল করেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৪হাজার পরিবার পেয়েছে ‘উপহার যাবে বাড়ি’ নামে বিশেষ খাদ্যসহায়তা। গোটা বাংলাদেশে এমন ব্যতিক্রমধর্মী মানিবক উদ্যোগের প্রণেতা চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামানের নেতৃত্বে এই কর্মসূচী সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
এই কর্মসূচি শেষ হলেও জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের স্বাভাবিক ত্রাণ কার্যক্রম চলবে। শেষ দিনে এই ব্যতিক্রমী কর্মসূচিতে ৪৫ টি পরিবারের মধ্যে উপহার বিতরণ করা হয়।
জানা যায়, সারাদেশের ন্যায় মহামারী করনা ভাইরাসের প্রভাবে কর্মহীন হয়ে পড়েছে প্রায় সকল পেশার মানুষ। এসব কর্মহীন মানুষদের মধ্যে খুবই মানবেতর জীবন যাপন করছে খেটে খাওয়া দিনমজুর এবং নি¤œ মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। এই অসহায় পরিবারগুলোর মাঝে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চলতি এপ্রিল মাসের শুরু থেকে ‘ত্রাণ যাবে বাড়ি নামের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এই কর্মসূচির আওতায় ঘরে বসেই ফোন করলেই একদল স্বেচ্ছাসেবী কর্মী ওই ব্যক্তির বাড়িতে জেলা প্রশাসনের খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেন। পরবর্তীতে এই কর্মসূচির নাম দেয়া হয় ‘উপহার যাবে বাড়ি’। প্রতিদিনই প্রায় দেড় শতাধিক রিকোয়েস্ট ফোন কল থেকে যাচাই-বাছাই করে ৮০ থেকে ১০০ টি পরিবারের মাঝে এই খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্র) আবদুল্রাহ আল মাহমুদ জামান এর ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে রোববার ৩১ মে এ তথ্য জানা গেছে। তিনি জানান, যারা চক্ষুলজ্জা ও লোক লজ্জার কারণে কারো কাছে হাত পাততে পারেন না ঐ সকল পরিবারগুলোর কাছে এ সংকটকালীন সময়ে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়াই ছিল এ প্রোগামের মূল উদ্দেশ্য। আমরা এ পরিবারগুলোর সম্মানের কথা ভেবে উপহার গ্রহীতা পরিবারের কারো মুখের ছবিও প্রকাশ করিনি।
আমাদের ২ টি হটলাইনে মোট ফোন কল রিসিভ করা হয়েছে ৭,১২৯ টি। তার মধ্যে ৪০০৫ টি পরিবারের মধ্যে ৪০ জন ভলান্টিয়ারের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি খাদ্যসামগ্রী পৌছে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও উক্ত উপহার ক্রয়,পরিবহণ, ওজন করা, প্যাকেট করা ইত্যাদি কাজে নিয়মিত ৭ জন স্কাউট ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, কর্মচারীগণ কাজ করেছেন। প্রতিটি প্যাকেটে ছিলো ৫ কেজি চাল, ১ কেজি আলু,১ কেজি পেঁয়াজ, ১ কেজি লবণ, আধা কেজি ডাল, ১ কেজি আটা, ১টি সাবান।
তিনি আরো জানান, আনুষ্ঠানিকভাবে এ কার্যক্রমের শেষ দিন হওয়ায় ভলান্টিয়ারদের কাল থেকে লকডাউন শিথিল পরবর্তী সময়ে নিজেদের ও জনসাধারণের জন্য করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান করা হয়। বিগত প্রায় আড়াই মাস যে সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ভলান্টিয়ারবৃন্দ, স্কাউট সদস্যবৃন্দ ও সাংবাদিকবৃন্দ এ কাজের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অশেষ কৃতজ্ঞতা।
বিশেষ করে জেলা প্রশাসক মো.মাজেদুর রহমান খান স্যারের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা যার উৎসাহ ও সার্বিক সহযোগিতার ফলে এ প্রোগামটি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে।
আমরা আশা করি দেশ ও দশের কল্যাণে যে কোনো ভালো কাজে জেলা প্রশাসন এভাবেই আপনাদের সর্বদা সহযোগী হিসেবে পাশে পাবে।
প্রাপ্ত তথ্য থেকে আরো জানা যায়, জেলা প্রশাসনের আরো এটি উদ্যোগ ছিলো সততা স্টোর। সততা স্টোরে কোনো বিক্রেতা থাকে না। ক্রেতারা নিজ থেকে পণ্য ক্রয় করে ক্যাশবাক্সে টাকা রাখেন। এই বার্যক্রম তদারকি করছে সেচ্ছাসেবীরা।
এছাড়াও জেলা প্রশাসকের আরেবটি উদ্যোগে “দুঃস্থদের বিনামূল্যে খাবার” এর আওতায় চাঁদপুর শহরের ৩ টি খাবার হোটেলে ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী ও দুঃস্থ মানুষ দুপুরের খাবার দেয়া হয়েছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply