নিয়ন্ত্রণে ভাঙন : মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের লাখো কৃষক-জনতার নির্ঘুম রাত

কামরুজ্জামান হারুন :
দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ চাঁদপুরের মতলবের মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধের কাচারীকান্দি এলাকায় আকস্মিক ভাঙন দেখা দিয়েছে। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও প্লাস্টিকের ব্যাগ ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। ভাঙন ও পানিতে ফসলহানির আতংকে নির্ঘুম রাত কাটান লাখো কৃষক-জনতা।


স্থানীয়রা জানান, ১৮ সেপেটম্বর শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মতলব উত্তর উপজেলা ফরাজিকান্দি ইউনিয়নের জনতা বাজার সংলগ্ন কাচারীকান্দি এলাকা দিয়ে মেঘনা নদী লাগোয়া মূল বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। অল্প সময়ের মধ্যে নদীর তীরবর্তী অংশের ২০০ মিটার অঞ্চল ভেঙে নদীতে বিলীন হতে থাকে। অল্প সময়ের মধ্যেই বাঁধের ৮০ মিটার এলাকা ভেঙে যায়। চারদিকে খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতেই শতাধিক যুবক নিজ উদ্যোগে ৮/১০টি ট্রলি গাড়িতে করে জনতা বাজার, চরমাছুয়া এলাকায় বাঁধ রক্ষার কাজে প্রস্তুত করা কয়েক সহস্রাধিক বালিভর্তি জিউব্যাগ এনে বাঁধ রক্ষার কাজে নেমে পড়েন। স্থানীয় আমিরাবাদ বাজারে বাশের বাজার থাকায় সেখানে থেকে বাঁশ এনে এরইমধ্যে পাইলিং এর ব্যবস্থা করতে থাকে। যুবকরা রাত ৩টা পর্যন্ত প্রাণপণে চেষ্টা করে বাঁধ রক্ষা করে।


সংশ্লিষ্টরা জানান, বেড়ি বাঁধের ভেতরের ১৭ হাজার ৫৪৮ হেক্টর জমিতে ধান, পাট, আখ, শাকসবজিসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল রয়েছে। এছাড়া বাঁধের ভেতরে কৃষকসহ প্রায় ৪ লাখ লোকের বসবাস রয়েছে।
মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও ) স্নেহাশিস দাস বলেন, খবর পেয়ে শনিবার রাতেই ঘটনাস্থলে চলে যাই। এলাকাবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে গভীর রাত পর্যন্ত বাধ রক্ষায় কাজ করে। আমাদের কাজে সার্বিক সহায়তা করেন মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ নাসির উদ্দিন মৃধা ও সঙ্গীয় ফোর্স।


জেলা যুবলীগের সাবেক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক গাজী সাখাওয়াত হোসেন জানান, শনিবার রাত আটটার দিকে হঠাৎ হইচই শুরু হলে আমরা লোকজন নিয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসি। সেখানে এলাকার যুবক এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত যুবকদের নিয়ে বেড়িবাঁধ রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা করি। স্থানীয় যুবকরা রাত ৩টা পর্যন্ত প্রাণপণ চেষ্টা করে বেড়িবাঁধ রক্ষায় কাজ করে।
এদিকে ভাঙনের খবর পেয়ে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন চাঁদপুর-২ নির্বাচনী আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব এডভোকেট নুরুল আমিন রুহুল, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পূর্ব রিজিওন) কাজী তোফায়েল হোসেন, প্রধান প্রকৌশলী (পূর্বাঞ্চল, কুমিল্লা) জহির উদ্দিন আহমেদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্নেহাশীষ দাস, মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মতলব সার্কেল) আহসান হাবীবসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমিরাবাদ বাজারের কাছে বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। এতে ৮০ মিটার এলাকা ভেঙে গেছে। আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ১ হাজার ব্যাগ জিও ব্যাগ এবং ৬ হাজার সিথেটিক ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়। এতে করে রাতেই ভাঙন নিয়ন্ত্রণে আসে। আবার শনিবার ভোর ৪টা থেকে নতুন করে ঠিকাদারের মাধ্যমে বস্তাভর্তি করা শুরু হয়েছে। এখন ভাঙন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এখন আতংকের কিছু নেই। এরপরও আমরা সতর্ক আছি। আশা করি, কোন সমস্যা হবে না।
চাঁদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন রুহুল বলেন, এখানে প্রায় সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকার একটা ডিপিপি হবার কথা। অতি দ্রুত এই বেড়িবাঁধ সুরক্ষার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় কাজটি দ্রুত গতিতে না করলে যেকোনও সময় বেড়িবাঁধ ভেঙে যেতে পারে। এর আগেও দুই বার ভাঙছে। আর সব মিলিয়ে প্রায় পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হবে। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পানি সম্পদ মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আর্কষণ করছি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply