পৌরবাসীর সেবায় যা আছে নৌকার প্রার্থী জিল্লুর রহমান জুয়েলের ইশতেহারে

বৃহস্পতিবার চাঁদপুর পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাড. জিল্লুর রহমান জুয়েল তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। নিম্নে তার ইশতেহারের পূর্ণবিবরণী তুলে ধরা হলো-
বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহিম
প্রিয় চাঁদপুর পৌরবাসী, আস্সালামু আলাইকুম ওয়া-রাহমাতুল্লাহি ওয়া-বারাকাতুহ
আমার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার শুরুতেই আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ৭৫ এর ১৫ই আগস্টের সকল শহীদদের, স্মরণ করছি মুক্তি সংগ্রামে আত্মাহুতি দেয়া ৩০ লক্ষ শহীদদের, সম্ভ্রম হারানো ৩ লাখ নির্যাতিত মা-বোনদের, স্মরণ করছি জেলখানায় নিহত জাতীয় চার নেতা সহ গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল আন্দোলনের সকল শহীদদের।
আগামী ১০ই অক্টোবর ২০২০ এ অনুষ্ঠিতব্য চাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচনে আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে মেয়র পদে অংশ নিচ্ছি। এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধীতাকারী সকল প্রার্থীর প্রতি রইলো আমার এবং আমার প্রিয় দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে অভিনন্দন।
পৌরবাসীর নাগরিক সেবার মান উন্নয়নে ও আধুনিক চাঁদপুর গড়ে তোলার প্রত্যয়ে আমার নির্বাচনী ইশতেহার উপস্থাপন করছি।
ঐতিহ্য সমৃদ্ধ বাণিজ্যিক চাঁদপুর :
পদ্মা, মেঘনার ও ডাকাতিয়া তিন নদীর মোহনায় এ শহরের গোড়াপত্তন হয় ১৭৭৮ সালে। পরবর্তীতে তৎকালীন ত্রিপুরা জেলায় অন্তর্গত চাঁদপুর মহকুমার প্রতিষ্ঠা হয় ১৮৭৮ সালে। ১লা জুলাই ১৮৯৫ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের শাখার স্থাপন, ২২টি বিখ্যাত পাট-কোম্পানীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন এ শহরকে তৎকালীন ভারতবর্ষের একটি অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে আসাম বেঙ্গল গেটওয়ে নামে পরিচিতি দেয়। এই শহরের বাণিজ্যিক গুরুত্বের কারনেই ১৮৯৬ সালের ১লা অক্টোবর পৌরসভা হিসেবে চাঁদপুরের মর্যাদা প্রাপ্তি। কালের বিবর্তনে চাঁদপুর তার বাণিজ্যিক গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছে। এ শহরের প্রাণ হচ্ছে বাণিজ্য। এ শহরকে আবারো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে হলে শেকড়ে প্রোথিত তার বাণিজ্যিক প্রাণটির পুনর্জাগরণ প্রয়োজন। নির্বাচিত হলে আমার পৌরসভায় প্রথম ও প্রধান কাজ হবে বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে চাঁদপুর শহরের পুরাণ বাজার অংশ নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা প্রনয়ণ করা।
চাঁদপুর শহর রক্ষার স্থায়্ ীবাঁধ নির্মাণে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এম.পি মহোদয়ের প্রচেষ্টায় জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার যে পরিকল্পনা প্রনয়ণ করেছে তা বাস্তবায়নে আমার পৌরসভা যুগ্পৎভাবে কাজ করবে। শহর রক্ষা বাঁধটিকে পরিবহন ও যাতায়াতের সুবিধার্থে রিভার ড্রাইভের আদলে গড়ে তোলা হবে।
বড়ষ্টেশনের ঐতিহ্যবাহী মাছ বাজার ও ঘাটটিকে সংরক্ষণ, প্যাকেজিং ও প্রক্রিয়াজাতকরণ সুবিধা সংযোজন করে কমপ্লেক্স আকারে পুনর্নির্মাণ করে চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী ইলিশ রফতানি বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করার উদ্যোগ নেয়া হবে।
নৌ-বন্দর হিসেবে চাঁদপুরের যাত্রা শুরু হাজার বছর পূর্বে সুলতানী আমলে। পণ্য পরিবহনের জন্য সম্প্রতি সম্পাদিত ভারত ও বাংলাদেশ নৌ চুক্তির আওতায় ব্যবহৃত বন্দর সমূহের একটি হচ্ছে চাঁদপুর । চাহিদা অনুযায়ী এ বন্দরটি আধুনিকভাবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে বর্তমান সরকার কাজ করছে। এ লক্ষ্যে ভূমি অধিগ্রহণ ও প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ চূড়ান্ত।
চাঁদপুরের সম্ভাবনা- পর্যটন :
পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের প্রিয় এ শহর। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যতবারই চাঁদপুরে এসেছেন ততবারই নদী কেন্দ্রিক পর্যটনের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন। এ সম্ভাবনা নিয়ে মাননীয় সাংসদ ডাঃ দীপু মনি এম.পি মহোদয়ের ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে। এ লক্ষ্যে পৌরসভা সরকারের সেই পরিকল্পনার আদলে চাঁদপুরকে গড়ে তুলতে কাজ করবে।
বড়ষ্টেশনের মোলহেড অংশটিকে আরো নান্দনিক ভাবে গড়ে তোলা হবে।
– শহরের পুরাণ বাজার ও নতুন বাজার প্রান্তের নির্মিতব্য স্থায়ী বাঁধের দীর্ঘ অংশ জুড়ে রিভার ড্রাইভের পাশাপাশি সবুজায়ন, দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য শৈলী ও বসার স্থান নির্মাণ করা হবে।
– ডাকাতিয়া ও মেঘনা নদীতে ভাসমান রেঁস্তোরা ও ওয়াটার বাস চালু করা হবে।
– পৌরসভার অর্থায়নে তারকাখচিত একটি আধুনিক আবাসিক হোটেল নির্মাণ করা হবে। যা দেশী-বিদেশী পর্যটকদের চাঁদপুরে অবস্থানকে নিরাপদ ও আকর্ষণীয় করবে।
নান্দনিক চাঁদপুর :
– শহরের ঐতিহ্যবাহী এস বি খাল, বিদ্যাবতী খালের প্রয়োজনীয় সংস্কার করে মূল নদীর সাথে সংযোগ করে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা হবে।
– চাঁদপুর শহরের লেকগুলোর দুই প্রান্ত বাঁধাই করে ফোয়ারা নির্মাণ করার মধ্য দিয়ে দৃষ্টিনন্দন করা হবে।
– বহুতল বিশিষ্ট একটি আধুনিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। এতে পাবলিক লাইব্রেরী, আর্কাইভ, মিনি অডিটোরিয়াম, জেষ্ঠ্য নাগরিকদের ও নারীদের জন্য পৃথক পৃথক নির্ধারিত ফ্লোর থাকবে। যাতে বিনোদনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
– পুরাণ বাজার ও নতুন বাজার অংশে একাধিক মুক্তমঞ্চ গড়ে তোলা হবে।
– চাঁদপুর শহর বিলবোর্ড মুক্ত করা হবে।
– পৌরসভার অর্থায়নে ও তত্ত্বাবধানে চাঁদপুর শহরকে সবুজায়ন করা হবে।
নাগরিক সুবিধা :
– পৌরসভার কার্যক্রম প্রযুক্তি নির্ভর ও ডিজিটালাইজড করা হবে।
– পৌরসভার প্রতিটি এলাকা পর্যায়ক্রমে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে।
– ড্রেনেজ সিস্টেমে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও সংস্কার করা হবে।
– পুরনো সড়ক যথাসম্ভব প্রশস্তকরণ ও সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে।
– যানজট নিরসনে একাধিক বিকল্প সড়ক নির্মাণ করা হবে।
– শহরের সকল সড়কে এলইডি লাইট স্থাপনের মাধ্যমে আলোকিত চাঁদপুর গড়ে তোলা হবে।
– পৌরসভার সকল নাগরিকদের জন্য বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।
– পৌরসভায় একটি আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প গড়ে তোলা হবে। বর্জ্য সংগ্রহ ও ডাম্পিং পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হবে। শহরের সকল ডাস্টবিন পর্যায়ক্রমে তুলে ফেলা হবে।
– মশক নিধনে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
– পৌরসভার অর্থায়নে শহরের পুরাণ বাজার ও নতুন বাজার অংশে দুটি আধুনিক কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করা হবে।
– পুরাণ বাজার অংশে একটি নতুন গণকবরস্থান তৈরি করা হবে।
– চাঁদপুর পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে ন্যূনতম একটি করে আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে। যাতে নারী ও পুরুষদের জন্য পৃথক পৃথক ব্যবস্থা থাকবে।
– মাদক, ইভটিজিং ও কিশোর গ্যাং নির্মূলে পৌরসভা জিরো টলারেন্সে থাকবে।
– পৌরসভার তত্ত্ববধানে ও অর্থায়নে একটি কার্যকরী মাদক নিরাময় কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।
– পালবাজার , নতুন বাজার, বিপনীবাগ বাজার, লোহারপুল মাছবাজার, বাকালীপট্টি মাছবাজার আধুনিকায়ন করা হবে।
– পরিকল্পিত চাঁদপুর নির্মাণে নকশা বহির্ভূত কোন স্থাপনা নির্মাণ হতে দেয়া হবে না।
– যানজট নিরসনে বিশেষ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করা হবে। অবৈধ যান চলাচল করতে দেয়া হবে না। আর নতুন কোন সিএনজি ও অটোরিক্সা লাইসেন্স প্রদান করা হবে না।
– নাগরিক সেবায় ২৪/৭ ভিত্তিতে হেল্পলাইন চালু করা হবে।
আমার এ ইশতেহার বাস্তবায়নে আমি চাঁদপুর পৌরসভার সকল নাগরিক ও সাংবাদিকদের সমর্থন ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
চাঁদপুর পৌরবাসীর ভালবাসা, স্নেহ ও বিশ্বাস আমার সামনে চলায় প্রেরণা যোগাবে। প্রত্যাশা করি সকল পৌরবাসীর দৃঢ় সমর্থন।
আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply