সরকার হিন্দু-মুসলিম সবাইকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ : ডা. জাফরুল্লাহ

শাখাওয়াত হোসেন শামীম :
ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার হিন্দু-মুসলিম সবারই জান-মালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এটি একতরফা কোনো ব্যাপার না।’
রোববার দুপুরে চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জে মন্দিরে হামলা ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তিনি। পরে তিনি রান্ধুনীমুড়া গ্রামে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন।


ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাধারণভাবে বললেন আমি সমস্ত মন্দিরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। আসলে তো কেউ তার কথা শোনে নাই। তার কথা শুনে যদি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতো তাহলে তো আজকে এই ছেলেগুলো মারা যেত না।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরও বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে তার গোয়েন্দা বাহিনী বোকা বানানিয়েছে। আমি উপদেশ দেই যদিও দোষটা আপনার না তারপরও আপনার পদত্যাগ করা উচিৎ। আপনার পদত্যাগ করা উচিৎ এই কারণে যে আপনার কথা আপনার বাহিনী শোনেন নাই। আপনাকে মিস গাইড করেছেন। আর পদত্যাগ করতে না পারলে যে চারজন মারা গেছে তাদের বাড়িতে যান। প্রত্যেক ইমাম সাহেবদের প্রত্যেক আজানের পূর্বে ‘হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই’ বলতে হুকুম করেন।
তিনি বলেন, ‘আক্রান্ত প্রত্যেকটি মন্দিরকে দেরি না করে দ্রুত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। পুলিশ পাহারা দিয়ে মন্দির-মসজিদ রক্ষা করা যাবে না। এখানে সরকারের ভুল আছে। সরকার যে ৫ হাজার কোটি টাকা মাদ্রাসাকে দিয়েছে সেখান থেকেই এর বীজ উৎপত্তি হচ্ছে। আমরা সবাই মিলে আমাদের ভাই-বোনদেরকে রক্ষা করবো।’
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘যখন মৌলভীরা মোদিবিরোধী আন্দোলন করেছিলো, তারা যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে একাধিকবার দেখা করেছিল। এটি ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনী পছন্দ করেনি। আমাদের গোয়েন্দা বাহিনী হচ্ছে- ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর অধঃস্তন কর্মচারী।’


তিনি বলেন, ‘ভারতে আ. লীগের যে বন্ধুরা আছেন তাদের অবস্থা একটু টলমলে হয়ে গেছে। ভারত ভাবছে- কেবল আওয়ামী লীগ না করে অন্যদের সঙ্গেও যোগাযোগ করবো কি না। এ অবস্থায় শেখ হাসিনা মনে করছেন- ওদেরকে নিশ্চিত করতে হবে- আমি ছাড়া তাদের কেউ রক্ষা করতে পারবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সবাইকে ভারতীয় আধিপত্যবাদের প্রতিবাদ করতে হবে। তবে এর কারণে যেন ভারতের মুসলিমরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তার জন্য সরকারকে সাহসী হতে হবে।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি বলেন, ‘জাতীয় সরকার করে, নিরপক্ষে ব্যক্তিদের এনে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে, সুষ্ঠু নির্বাচন করে আমরা সবাই একত্রে থাকতে চাই।’
তিনি বলেন, আমি হাজীগঞ্জের পুলিশ ও সাংবাদিকদের ধন্যবাদ দিতে চাই। আপনারা একত্রিত হয়ে পরিস্থিতিটাকে মোকাবেলা করেছেন। কিছু ধর্মান্ধ ব্যক্তি কিছু যুবককে বিপথে নিয়েছেন। সেটা আপনারা ঠেকাবার চেষ্টা করেছেন। আমি দুটো মন্দির দেখেছি, এদের বাড়িঘর দেখেছি এবং আপনাদের কথা শুনেছি। আপনারা দেশপ্রেমিক সাংবাদিকের কাজ করেছেন। আমার কাছে মনে হয়েছে আপনারা নিরপেক্ষভাবে কথা বলেছেন। আপনারা কোন কল্পকাহিনী সৃষ্টি করেন নাই।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, ৬৯ শহীদ আসাদের ছোট ভাই ডা. নুরুজ্জামান, হাবিবুর রহমান রিজু, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রচার ও মিডিয়া সমন্বয়ক হাসিবুদ্দিন সোহেল, রাজনৈতিক সমন্বয়ক ফরিদুল হক, সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমন, অর্থ সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়া, সদস্য সারোয়ার তুষার, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, ভাসানী অনুসারী পরিষদেও ছাত্রনেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাট প্রমুখ।
উল্লেখ্য, কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে হাজীগঞ্জে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহতরা হলেন : চাঁপাইনবাবগঞ্জের সুন্দরপুর বাগডাঙা এলাকার সামছুর ছেলে বাবলু (৩৫), হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের রান্ধুনীমুড়ার শুকু কমিশনার বাড়ির তাজুল ইসলামের ছেলে আল আমিন (১৮) ও একই ওয়ার্ডের সেকান্দর বেপারী বাড়ির মো: ফজলুর ছেলে হৃদয় (১৪)। এ ছাড়াও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে হাজীগঞ্জ পৌরসভার রান্ধুনীমুড়ার বাচ্চুর ছেলে শামীম (১৯) মারা যান।

শেয়ার করুন

Leave a Reply