হাজীগঞ্জে এলজিইডি সড়কপাশের সরকারি গাছ কেটে নেয়ার অভিযোগ!

শাখাওয়াত হোসেন শামীম :
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে এলজিইডি সড়কে লক্ষাধিক টাকার সরকারি গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বাউরপাড় এলাকায় সেন্দ্রা-পালিশারা সড়কে আব্দুর রহমান চৌধুরী (৬৫) নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে ১৫টি গাছ কাটার অভিযোগ উঠে। তিনি ওই ইউনিয়নের পাঁচুই গ্রামের চৌধুরী বাড়ির মৃত সোলেমান চৌধুরীর ছেলে। তিনি একই ইউনিয়নের বাউরপাড় এলাকায় দীর্ঘদিন বসবাস করে আসছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত তিনদিন ধরে স্থানীয় আব্দুর রহমান চৌধুরী তার বাড়ির সামনে সেন্দ্রা-পালিশারা এলজিইডি সড়কের পাশে প্রায় ৩০ বছরের পুরানো গাছগুলো লোকজন ভাড়া করে কাটতে থাকেন। পরবর্তীতে গাছগুলো কাটাবস্থায় তিনি স্থানীয় গাছের বেপারী (গাছ ব্যবসায়ী) সোলেমানের কাছে বিক্রির করে দেন।
খবর পেয়ে উপজেলা প্রকৌশলী বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাতে অবহিত করেন। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনায় উপজেলা বন কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পেয়ে তাৎখনিক গাছ কাটা বন্ধ করে দেন।
এদিকে স্থানীয়রা আরো জানান, এর আগেও সড়কের পাশে বেশ কয়েকটি গাছ বিক্রি এবং গাছ বিক্রি করার উদ্দেশ্যে কয়েকটি গাছের ঘুরি ও ডালপালা কেটে রাখেন আব্দুর রহমান চৌধুরী। যার ধারাবাহিকতায় তিনি গত শুক্রবার আবারো সড়কের পাশে গাছ কাটতে শুরু করেন।
গাছ ক্রয়ের সত্যতা স্বীকার করে গাছ বেপারী সোলেমান (৪৫) জানান, তিনি ৮০ হাজার টাকা দিয়ে আব্দুর রহমান চৌধুরীর কাছ থেকে গাছগুলো ক্রয় করেছেন। তবে স্থানীয়রা জানান, গাছগুলোর দাম(মূল্য) আরো অনেক বেশি হতে পারে। কারণ গাছগুলো অনেক বড় ও মোটাসোটা।
গাছ কাটার বিষয়টি স্বীকার করে আব্দুর রহমান চৌধুরী বলেন, এই সড়কের উত্তর ও দক্ষিণ এবং পূর্ব ও পশ্চিমে আমার ব্যক্তিগত সম্পত্তি রয়েছে এবং আমার সম্পত্তির উপর দিয়ে ওই সময়ে (সম্ভবত ১৯৯৭ সাল) এই রাস্তাটি বড় (প্রশস্ত) করা হয়। পরবর্তীতে আমি ভরাটকৃত রাস্তায় শতাধিক গাছ লাগাই। তিনি আরো বলেন, রাস্তার পাশেই আমার ব্যক্তিগত জমি ভরাট করে সেখানে একটি পাঞ্জেগানা মসজিদ ও মৃত ব্যক্তিদের জানাযা প্রদানে মাঠ নির্মাণের লক্ষে দেয়াল নির্মাণ করবো। তাই রাস্তার পাশে অবস্থিত গাছগুলো বিক্রি করেছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে সরকারের কেউ (সংস্থা বা বিভাগ) গাছ লাগায়নি (রোপন)। আমি গাছ লাগিয়েছে, তাই আমার গাছ আমি বিক্রি করেছি।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. রেজওয়ানুর রহমান জানান, রোববার আমি সাইট ভিজিটে গিয়ে সেন্দ্রা-পালিশারা সড়কে কতিপয় লোকজনকে গাছ কাটতে দেখি। পরে আমি গাড়ি থেকে নেমে গাছ কাটা বন্ধের নির্দেশনা দেই এবং বিষয়টি বন কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করি।
এ বিষয়ে উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. তাজুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, আব্দুর রহমান চৌধুরী নামের ওই ব্যক্তি কয়েকটি গাছ কেটে ফেলেছেন এবং গাছ কাটার উদ্দেশ্যে আরো কয়েকটি গাছের উপরিভাগ (ঘুরি ও ডাল-পালা) ছাঁটাই করে রেখেছেন। তিনি বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গাছ কাটা বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোমেনা আক্তার জানান, খবর পেয়ে ওইদিন (সোমবার) বন কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তাৎখনিক গাছ কাটা বন্ধ করেছেন। এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তাঁকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply