চাঁদপুরে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে ২ হাজার ৮শ হেক্টর ফসলি জমি আক্রান্ত

সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রোপা আমন, শীতকালীন সবজি, পেঁয়াজ, মরিচ, সরিষা, ভুট্টা, গম
চাঁদপুর প্রতিদিন রিপোর্ট :
চাঁদপুরে ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ এর প্রভাবে ঝড়ো হাওয়া ও ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে সবচে বেশি আক্রান্ত হয়েছে রোপা আমন, শীতকালীন সবজি, পেঁয়াজ, মরিচ, সরিষা, ভুট্টা, গমসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল। ১৯ নভেম্বর (রবিবার) এক প্রতিবেদনে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে জেলায় ২ হাজার ৮৫৯ হেক্টর ফসলি জমি আক্রান্ত হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন কৃষক ও চাষীরা।

হাজীগঞ্জ উপজেলার বলাখাল গ্রামের কৃষক বিল্লাল হোসেন বলেন, ৫ একর জমিতে লাউ, চালকুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, খীরা ও শসা চাষ করেছিলাম। বৃষ্টির পানিতে সবগুলো ফসলে পচন ধরেছে। এখন কীভাবে চলবে সংসার আর কীভাবে কিস্তি পরিশোধ করবো, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’
সদর উপজেলার ছোবহানপুর ও বাগাদী গ্রামের জমিগুলোতে কৃষকরা পাকা ধান দুদিন আগে কেটে জমিতে শুকানোর জন্য রেখেছেন। সেবসব জমিতে এখন হাটু সমান পানি। অনেক জমির পাকা ও আধাপকা ধান বাতাসে নুয়ে পড়েছে। এসব এলাকার খাল ও নালা ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা নেই।
ছোবহানপুর মাঠে দুদিন আগে কেটে রাখা ধান পানি থেকে তুলে আনছেন কৃষক মো. হাবিব। তিনি জানান, এ বছর তিনি পৌনে ৩ একর জমতি আমন ধানের আবাদ করেছেন। অধিকাংশ জমি এখন পানির নীচে। প্রায় ১লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন কি করবেন তিনি বুঝতে পারছেন না।
চাঁদপুর সদরের বাগাদী মাঠের কৃষক হাবিব বেপারী ও ওবাদ শেখ জানান, তাদের পুরো মাঠের অধিকাংশ জমির ধান হাটু সমান পানির নীচে। অনেকেই ধান কেটে শুকানোর জন্য দু’তিন দিন আগে রেখেছেন। চিন্তাও করতে পারেননি ঘূর্ণিঝড়ে এমন ক্ষতির সম্মুখিন হবেন।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের কৃষক ছিদ্দিকুর রহমান জানান, সকদিরামপুর মাঠে তার দেড় একর জমিতে বিআর-৪৯, বিনা-৭ ও ১৭ ধানের আবাদ করেছেন। আগে কেটে রাখা ধান শ্রমিক নিয়ে তুলছেন। পানিতে ভিজে যাওয়ার কারণে ওজন বেড়ে গেছে।
ওই এলাকার আরেক কৃষক আব্দুল খালেক বেপারী , তার সব শেষ। প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করে এক একর জমিতে বিআর-২২ জাতের ধানের আবাদ করেছেন। এই ধানগুলো উচ্চতায় অনেক বড়। যার ফলে ঘুর্ণিঝড়ে বাতাসের তীব্রতায় সব ধান জমিতে নুয়ে পড়েছে। এবছর তিনি বড় ধরণের লোকসানে পড়বেন। তিনি সরকারের কাছে সহায়তা কামনা করেন।
চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় মোট ৩৩ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে ফসল চাষাবাদ করা হয়। এর মধ্যে ফসল কেটে নেওয়ার পর বর্তমানে ৩২ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে থাকা ফসলের মধ্যে ঝড়ে আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ৮৫৯ হেক্টর জমি। আক্রান্ত ফসলের মধ্যে রয়েছে ১ হাজার ১১৭ হেক্টর জমির শীতকালীন সবজি, রোপা আমন ৬২০ হেক্টর, বোনা আমন ৬৫ হেক্টর, বোরো বীজতলা ৯৬ হেক্টর, আলু ৪২ হেক্টর, সরিষা ৫৭৫ হেক্টর, ভুট্টা ১১৩ হেক্টর, গম ৮ হেক্টর, পেঁয়াজ ৭ হেক্টর, মরিচ ১৮ হেক্টর এবং অন্যান্য ফসল আক্রান্ত হয়েছে ১৯৮ হেক্টর।
চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দিকী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ এর প্রভাবে জেলায় আধাপাকা ও পাকা রোপা আমান, শীতকালীন সবজিসহ জমিতে থাকা নানা ধরনের ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমাদের কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করছেন। ঝড়ে আক্রান্ত জমির পরিমাণ করে প্রাথমিক নির্ধারণ করে প্রতিবেদন প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী এই জমিগুলো ঝড়ে আক্রান্ত হয়েছে। তবে আক্রান্ত জমির সব ফসলই হয়তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। আমরা এক সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিবো।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কোন প্রণোদনা দেয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাবো। সরকার যদি কৃষকদের এখন কোন প্রনোদনা দিলে সেটি তারা পাবেন। তা না হলে পরবর্তীতে কোন প্রণোদনা এলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেওয়া হবে।

শেয়ার করুন