মতলবে শিশু মহিব হত্যার দায়ে জেঠাসহ ২ জনের মৃত্যুদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক :
মতলব দক্ষিণে আপন ভাতিজা মহিবকে [৭] হত্যার দায়ে জেঠা জামাল হোসেন ও অপর সহযোগী সজীবকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া উভয় আসামিকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল রোববার (৮ নভেম্বর) বিকেলে আসামীদের উপস্থিতিতে এই আদেশ দেন জেলা ও দায়রা জজ এস.এম. জিয়াউর রহমান।
পুলিশ ও অভিযোগসূত্রে জানা যায়, মতলব দক্ষিণ উপজেলার নায়েরগাঁও উত্তর ইউনিয়নের ঘোনা গ্রামের প্রধানীয়া বাড়ির প্রবাসী মাসুদ রানা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শাহিনা আক্তারের ছেলে মাহিবের ছেলে দুপুরে বাড়ি থেকে ঘোনা স্কুল মাঠে খেলতে যায়। এরপর সন্ধ্যা হলেও তার কোন খোজ-খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। এর পরদিন তার বড় ভাই জামাল হোসেন এবং তার স্ত্রী থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
পুলিশ ওই জিডির তদন্ত কাজ পরিচালনাকালে জামাল হোসেন মোবাইল বন্ধ করে পালিয়ে যান। এতে করে মুহিবের বাবার সন্দেহ হয়- বড় ভাই জামাল ও অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন লোক অবৈধ লাভের আশায় তার অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে আটকে রাখা হয়েছে। পরে নিখোজের ৭ দিন পর মাহিবের মৃতদেহ একই গ্রামের তাজুল ইসলামের টয়লেটের ট্যাংক থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ মোবাইল ফোন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে মাহিবের চাচা মামলার বাদী জামাল ও পাশের বাড়ির সজিবকে আটক করে।
পুলিশ জানায়, মামলার বাদী চাচা জামাল শিশুটিকে মুক্তিপণের জন্য অপহরণ করেছিল। পরবর্তীতে মুক্তিপণ আদায় করতে না পেরে তাকে হত্যা করে লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন সময়ে মতলব দক্ষিণ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. ইব্রাহীম খলিল তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।
রায়ে উল্লখ করা হয়, আদালত সকল ঘটনাবলী পর্যালোচনা করে আসামীদের প্রতি কোনরুপ অনুকম্পা বা সহানুভূতির সুযোগ না থাকায় তাদেরকে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্দুণ্ড ও অর্থদণ্ডের সিদ্ধান্ত নেয়।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন পিপি রনজিত কুমার রায় চৌধুরী ও অ্যাড. মো. মোক্তার আহম্মেদ অভি। আসামীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন মো. শফিকুল ইসলাম ভূইয়া, মো. মুরাদ হোসেন চৌধুরী ও মোহাম্মদ আলী।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি রনজিত কুমার রায় চৌধুরী বলেন, আপন জেঠা তার ছোট ভাইয়ের শিশু সন্তানকে হত্যা করে সেফটিক ট্যাংকে ফেলে রাখে। পরবর্তীতে নিখোজের নামে আসামীরা এলাকায় মাইকিংয়ের নাটকও করে। এমনকি তারা থানায় একটি জিডিও করে। পরে খবর পেয়ে শিশুটির বাবা দেশে এসে থানায় মামলা করেন। নিখোজের ৭ দিন পর শিশু মহিবের মরদহে উদ্ধার করে পুলিশ।
তিনি বলেন, এটি একটি হৃদয় বিদারক জঘন্য ঘটনা। আদালতের আসামীদের স্বীকারোক্তি ও সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আসামীদের উপস্থিতিতে তাদের মৃত্দুণ্ডাদেশ দিয়েছেন। এ রায়ে বাদী ন্যায় বিচার পেয়েছে। আমরা সন্তুষ্ট।

শেয়ার করুন

Leave a Reply