করোনার চেয়ে দ্বিগুণ মৃত্যু পানিতে ডুবে

চাঁদপুর প্রতিদিন ডেস্ক :
করোনার চেয়ে পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা দ্বিগুণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছে গণমাধ্যম ও উন্নয়ন যোগাযোগ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘সমষ্টি’। সংগঠনটি বলছে, করোনা আক্রান্ত হয়ে দেশে গড়ে প্রতিদিন ২০-২৫ জনের মতো মৃত্যু হচ্ছে। ঠিক একইভাবে পানিতে ডুবে দৈনিক ৩৯ জন শিশু (১-৬ বছর বয়সী) মারা যাচ্ছে। আর পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণকারী সব বয়সীর সংখ্যা গড়ে প্রায় ৫০ জন। এ অবস্থায় করোনার মতো পানিতে ডুবে মৃত্যুর বিষয়টিতেও গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করছে সংগঠনটি।
মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) রাজধানীর একটি ভবনে আয়োজিত কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট (এসডিজি) অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে পাঁচ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২৫ নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। রোগ-বালাইয়ের বাইরেও বাংলাদেশে প্রতিবছর বড় সংখ্যক শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। তাই শিশু মৃত্যু নিয়ে এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে প্রতিরোধযোগ্য এ মৃত্যু কমানো জরুরি।
পারিবারিক পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও সহযোগিতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে বহু সংখ্যক শিশুকে পানিতে ডুবে মৃত্যু থেকে রক্ষা করা সম্ভব। এটি করতে পারলে এসডিজির লক্ষ্য অর্জন সহজ হবে। এজন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি গণমাধ্যমকেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
কর্মশালায় জানানো হয়, শিশু মৃত্যুর জন্য দায়ী বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকে বৈশ্বিকভাবে এসডিজির অন্তর্ভুক্ত করা হলেও পানিতে ডুবে মৃত্যুকে অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত করা হয়নি। ফলে অসুস্থতাজনিত কারণে শিশু মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হলেও পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার প্রতিরোধে কর্মসূচি গ্রহণ না করা হলে সার্বিকভাবে শিশুমৃত্যুর উচ্চহার থেকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এতে আরও জানানো হয়েছে, পানিতে ডুবে মৃত্যু সারা বিশ্বে আঘাতজনিত কারণে শিশুমৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী প্রতিবছর তিন লাখ ৫৯ হাজার ৪০০ জন ব্যক্তি পানিতে ডুবে মারা যান। এদের ২০ শতাংশের বয়স পাঁচ বছরের কম। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হারে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম। বাংলাদেশে ১ থেকে ৪ বছর বয়সী শিশুদের মোট মৃত্যুর ৪৩ শতাংশ পানিতে ডুবে যাওয়ায় হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, দেশে প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন পানিতে ডুবে মারা যায়। এদের মধ্যে ৩২ জনই চার বছরের কম বয়সী। বছরে এ সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১২ হাজারে। এছাড়া পানিতে ডুবে যাওয়ার কারণে আরও ১৩ হাজার শিশু স্থায়ী পঙ্গুত্ব বরণ করে। এক লাখ শিশু পানিতে ডুবে যাওয়ার কারণে বিভিন্নভাবে আহত হয়।
কর্মশালায় বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) পরিচালক ড. আমিনুর রহমান জানান, এত শিশুর মৃত্যুর পরেও বিষয়টি পরিকল্পনা ও নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে অগ্রাধিকার তালিকায় জায়গা করে নিতে পারেনি। ফলে এ নিয়ে সরকারি পর্যায়ে বা জাতীয়ভাবে দৃশ্যমান কোনও উদ্যোগ নেই।
তিনি জানান, সিআইপিআরবি ২০০৫ সাল থেকে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু প্রতিরোধে কার্যকর স্থানীয় ব্যবস্থা উন্নয়নে কাজ করে আসছে। এতে দেখা গেছে, দারিদ্র্য, অসচেতনতা ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের অভাবে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনের বরাতে তিনি বলেন, গ্রামভিত্তিক শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র সফলভাবে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু রোধে কার্যকর বলেও জানান তিনি। পাশাপাশি এ গ্রামভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্যও সহায়ক।
সাংবাদিকদের জন্য আয়োজিত এ কর্মশালার বিভিন্ন অধিবেশন পরিচালনা করেন সমষ্টির পরিচালক ও চ্যানেল আইয়ের সিনিয়র বার্তা সম্পাদক মীর মাসরুর জামান, গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকিসি ইনকিউবেটরের কান্ট্রি লিড রুহুল কুদ্দুস প্রমুখ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply